পারিবারিক কলহের কারণে চিত্রনায়িকা পপির চাচা মিয়া বাবর হোসেনকে খুলনার সোনাডাঙ্গাস্থ জমিদার বাড়ী ‘মিয়াবাগ’ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। অসহায় বয়স্ক এই মানুষটি এখন অন্যের বাড়ীতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) বেলা ১২ টায় খুলনা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মিয়া বাবর আলী এ অভিযোগ করেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমার বাবা জমিদার মৃত ইসমাঈল মিয়ার ৬ ছেলে ও ৩ মেয়ের মধ্যে আমি ৪র্থ। অন্যান্য শরীকদের মতো আমিও মিয়াবাগের একজন শরীক। আমি নিঃসন্তান থাকায় বিভিন্ন সময় ঢাকায় থাকি। এই সুযোগে আমার ভাইয়ের স্ত্রী শিউলি বেগম ও তার মেয়ে জামাই ট্রাস্ট ব্যাংকের কর্মকর্তা তারেক আহমেদ চৌধুরী আমার মায়ের রুম, ড্রইং রুম, গেষ্ট রুমসহ বিভিন্ন রুম দখল করে আছে। আমি ৪ জুলাই বেলা ১১ টায় বাড়িতে এসে দেখি আমার ভাইয়ের স্ত্রী শিউলি বেগমের রুম বাদে অন্য সকল রুম তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। এ দৃশ্য দেখে আমি হতবাক হয়ে যাই। তখন শিউলি বেগমকে বলি আমি রাতে কোথায় থাকবো? সে তখন আমাকে বলে আপনি দ্বিতীয় তলায় থাকেন। এঘটনার পরের দিন ৫ জুলাই সকাল ৮ টার দিকে শিউলি বেগম এবং তার মেয়ে জামাই তারেক আহমেদ চৌধুরী আমাকে আধা ঘন্টা সময়ের মধ্যে বাসা থেকে নেমে যাওয়ার জন্য হুমকি দেয়। ওই সময় বাসা হতে নামতে দেরি হওয়ায় তারা আমার কাছে থাকা মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ভেঙ্গে ফেলে এবং আমাকে মারধোর করতে উদ্যত হয়। মানসম্মানের ভয়ে আমি অসহায় হয়ে বাসা নেমে নিচে এসে বসি। এরপর তারা কিছু অজ্ঞাতনামা লোকজন ডেকে এনে আমার ঘাড় ধরে বাসা থেকে রাস্তায় বের করে দেয়। পরবর্তীতে আমি আমার পরিচিতজন মান্নানের বাসায় আশ্রয় নেই। এরপর আমি আমার নিকটতম লোকজনের সাথে যোগাযোগ করে সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দেই।
মিয়া বাবর হোসেন আরও বলেন, জমিদার বাড়ির সুনাম ক্ষুন্ন হওয়ার ভয়ে আমি এতোদিন নিশ্চুপ ছিলাম। পারিবারিক বিষয়গুলো ঘরের বাইরে আনতে চাইনি। কিন্তু জামাই নামধারী ট্রাস্ট ব্যাংকের কর্মকর্তা তারেক আহমেদ চৌধুরীর অসৌজনমূলক আচরণ, প্রতিনিয়ত ভয়ভীতি প্রদর্শন, হুমকি-ধামকি দিয়ে পরিবেশ অস্বাভাবিক করে তুলেছে। ট্রাস্ট ব্যাংকে চাকুরী করার সুবাদে প্রতিনিয়ত হুমকি দেয়।
এ ব্যাপারে খোঁজ নিতে অভিযুক্ত তারেক আহমেদ চৌধুরীকে ফোন দেওয়া হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি দীর্ঘদিন খুলনায় যাইনা। এ বিষয়ে আমাকে কেন জড়ানো হলো বুঝতে পারছি না। মিয়া বাবর হোসেন ৭০ বছর আগে তার সম্পত্তি বিক্রি করে চলে গেছেন। জমিদার বাড়ির যে অংশটুকু তার ছিল সেটি তারই আপন ছোট ভাই চিত্রনায়িকা পপির বাবা আমির হোসেন টুলুর কাছে বিক্রি করেছেন। টুলু জীবিত থাকাকালে বিক্রিত ওই অংশটুকু তার মেয়ে খেয়ালীকে লিখে দেন। মিয়া বাবর হোসেন ইতিমধ্যে তার ফুফুর কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি নষ্ট করেছেন।
এসব অভিযোগকে মিথ্যা বলে দাবি করে মিয়া বাবর হোসেন বলেন, তার বয়স এখন ৭৩ বছর। ৭০ বছর আগে তিনি ছিলেন তিন বছরের নাবালক। তখন সম্পত্তি প্রাপ্তি এবং বিক্রি করার প্রশ্নই আসে না। তারেক আহমেদ চৌধুরী মিথ্যা কথা বলেছেন বলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান।
এ ব্যাপারে সোনাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ শফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এটা তাদের পারিবারিক ব্যাপার। অভিযোগ শুনে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়। পরে বাড়ির লোকজন তাকে ঘরের দরজা খুলে দিলে তাকে ঢুকতে দেয়। পরে তিনি আমাদের সাথে আর কোন যোগাযোগ করেনি। এ ব্যাপারে আর কোন কিছু তিনি জানেন না বলে জানান তিনি।
খুলনা গেজেট/এসএস